WELCOME TO NANDAIL NEWS - REFLECTION OF TIME - স্বাগতম- নান্দাইল নিউজ - সময়ের প্রতিচ্ছবি - স্বাগতম- নান্দাইল নিউজ -সময়ের প্রতিচ্ছবি - স্বাগতম- নান্দাইল নিউজ - সময়ের প্রতিচ্ছবি - স্বাগতম- নান্দাইল নিউজ -সময়ের প্রতিচ্ছবি - স্বাগতম- নান্দাইল নিউজ - সময়ের প্রতিচ্ছবি - স্বাগতম- নান্দাইল নিউজ - সময়ের প্রতিচ্ছবি

শুক্রবার, ফেব্রুয়ারী ২৪, ২০১২

ঘোড়ায় চড়িয়া মর্দ্দ ভিক্ষা করে!


শাহ্ আলম ভূঁইয়া, নান্দাইল সংবাদদাতা
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

নান্দাইল (ময়মনসিংহ): বাংলায় প্রবচন আছে- ‘ঘোড়ায় চড়িয়া মর্দ্দ হাঁটিয়া চলিল’। ঠিক সেরকম না হলেও- ‘ঘোড়ায় চড়িয়া মর্দ্দ ভিক্ষা করিতে গেল-’ এ কথারই বাস্তব উদাহরণ হচ্ছে ময়মনসিংহের রফিকুল ইসলাম (২৭)।

তিনি ঘোড়ায় চড়ে ভিক্ষা করেন বলে বলা হয়েছে এ কথা। রফিকুলের এভাবে ভিক্ষাবৃত্তির একটা কারণও আছে। তিনি শারীরিক প্রতিবন্ধী বলে তাকে ঘোড়ায় চড়ে ভিক্ষা করতে হয়। তার দুই পা সরু কাঠির মতো। হাঁটতে পারেন না। তাই, ঘোড়ায় চড়ে ভিক্ষা করেন বেঁচে থাকার জন্য।

আর এভাবে ভিক্ষা করে তার পরিবারের ৭ সদস্যের ভরণ-পোষণ মেটাতে হয় রফিকুলকে। তার বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার মোয়াজ্জেমপুর ইউনিয়নের রামজীবনপুর  গ্রামে।

রফিকুল ইসলাম ছোট বেলায় ভালোই ছিলেন। কিন্তু ৬ বছর বয়সে অজ্ঞাত রোগে তার পা দুটো চিকন হতে শুরু করে। তারপর একেবারেই দু’ পায়ে শক্তি হারিয়ে ফেলেন তিনি। তারপর তিনি শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়ে যান। তারপরও জীবন থেমে থাকে না তার। জীবনের তাগিদেই রফিকুলকে ভিক্ষাবৃত্তিতে নামতে হয়। কারণ, তাকে কাজ দেওয়ার মতো কেউ ছিল না। লেখাপড়াও বেশি করা হয়নি তার দারিদ্র্যের কষাঘাতের জন্য!

৪ ভাই, ২ বোন, বাবা-মা ও স্ত্রীকে নিয়ে রফিকুলের সংসার। আগে ঢাকায় ভিক্ষা করতেন। বেশ ভালোই চলছিল। কিন্তু বড় ভাই বিয়ে করে আলাদা হয়ে যান। বৃদ্ধ বাবা-মা, প্রতিবন্ধী আরেক ভাই ও স্ত্রীর কথা ভেবে তাকে ঢাকা ছেড়ে চলে আসতে হয় নিজ উপজেলা নান্দাইলে।

বাড়িতে এসে তিনি মায়ের গহনা বিক্রি করে ৯ হাজার টাকা পান। আর সেই টাকাই দিয়ে ঘোড়া কেনেন রফিকুল ইসলাম। মায়ের গহনা বিক্রির টাকায় কেনা ঘোড়ায় চড়েই মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ভিক্ষা করেন তিনি। প্রতিদিন ভিক্ষা করে তার আয় হয় ৪শ থেকে ৫শ টাকার মতো। এতে বেশ ভালোই চলছে রফিকুলের সংসার।

ভিক্ষাবৃত্তি বেছে নেওয়ার বিষয়ে রফিকুল বাংলানিউজকে জানালেন, ‘কেউ কি আর ইচ্ছা করে ভিক্ষা করে? কেউ কি আর ইচ্ছা করে ভিক্ষুকের জীবন বেছে নেয়! বাধ্য হয়েই এ পেশাতে আসতে হয়েছে আমায়!’

রফিক তার সঙ্গের ঘোড়াটিকে ‘জীবনের শ্রেষ্ঠ বন্ধু’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘এ ঘোড়া আমার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন।  ঘোড়া আমাকে বোঝে, আর আমিও ঘোড়াটিকে বুঝি! তাই, আমাদের এত বন্ধুত্ব!’

রফিকুলের বৃদ্ধ বাবা গিয়াস উদ্দিন (৬৮) জানান, রফিকুল এই ঘোড়াটিকে প্রশিক্ষণ দিয়ে তার সঙ্গীর মতো করে গড়ে তুলেছে।

মা সালেহা খাতুন (৫৫) জানান, ছেলের ইচ্ছাতেই নান্দাইলের কালেঙ্গা গ্রামের রশিদের মেয়ে শিরিনের সঙ্গে বিয়ে দেই।’

এভাবেই চলছে রফিকুলের জীবন, তার সংসার। এভাবেই জীবনের ঘানি টেনে চলতে হবে রফিকুলকে শুধুমাত্র বেঁচে থাকার জন্য, পরিবারের অন্যান্য সদস্যকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য!

আমাদের জানাশোনা এ সমাজে এমন কিছু মানুষ আছেন, যারা জীবনের কাছে হেরে যেতে চান না। যুদ্ধ করেই বেঁচে থাকতে চান। রফিকুল তাদেরই একজন। নিজের শারীরিক প্রতিবন্ধিতাকে জয় করে নিজের মতো করে বেঁচে থাকার পথ বেছে নিয়েছেন রফিকুল ইসলাম।

ভিক্ষা ছাড়া আর কোনো কাজের সুযোগ না থাকায় তাকে ভিক্ষাবৃত্তির পথেই আসতে হয়েছে। সমাজের মানুষ তাকে ঘৃণার চোখেন দেখেন নি। বরং ইতিবাচকভাবে তার জীবন সংগ্রামকে শ্রদ্ধার সঙ্গেই দেখেছেন। আর সে কারণেই আজও রফিকুলের মতো মানুষেরা বেঁচে থাকার ও ভালোবাসা পাওয়ার আশা করেন, আশাকে ভরসা করে সারা জীবন যুদ্ধ করে যান!

বাংলাদেশ সময় : ১১৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১২