WELCOME TO NANDAIL NEWS - REFLECTION OF TIME - স্বাগতম- নান্দাইল নিউজ - সময়ের প্রতিচ্ছবি - স্বাগতম- নান্দাইল নিউজ -সময়ের প্রতিচ্ছবি - স্বাগতম- নান্দাইল নিউজ - সময়ের প্রতিচ্ছবি - স্বাগতম- নান্দাইল নিউজ -সময়ের প্রতিচ্ছবি - স্বাগতম- নান্দাইল নিউজ - সময়ের প্রতিচ্ছবি - স্বাগতম- নান্দাইল নিউজ - সময়ের প্রতিচ্ছবি

শুক্রবার, ফেব্রুয়ারী ২৪, ২০১২

নান্দাইলে বক দিয়ে বক শিকার


শাহ্ আলম ভূঁইয়া, নান্দাইল সংবাদদাতা
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

জীবনানন্দ দাশের কবিতায় শিকারির গুলির আঘাত এড়িয়ে নম্র নীল জ্যোৎস্নার ভেতর দিয়ে হাঁসের উড়ে যাবার কথা আছে।
কিন্তু মানুষের কূটকৌশল আর অভিনব কুবুদ্ধির ফাঁদ এড়িয়ে নিরীহ বকেরা কী করে পার পাবে...!!!
নান্দাইল(ময়মনসিংহ) : ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলায় ফাঁদ পেতে দেদারছে বক নিধন চলছে। ফলে ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের চিরচেনা বক । পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন উপেক্ষা করে নির্বিচারে এই বক নিধনের কারণে অচিরেই এ প্রজাতির হারিয়ে যাওয়ার আশংকা করছেন পরিবেশবাদীরা।


গ্রামের কিছু মানুষের ধারণা, বকের মাংস খেলে শরীরের বিভিন্ন প্রকারের বাত রোগ নির্মূল হয়। তাছাড়া অনেকেই বকের মাংস খেতে ভালবাসেন। এ কারণে বকের মাংসের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। শিকারীরা একটি বক ৬০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি  করে থাকে। গড়ে প্রতিদিন একজন শিকারী আট থেকে দশটি বক শিকার করে।

নান্দাইল উপজেলার প্রায় সর্বত্রই ফাঁদ পেতে বক নিধন সারা বছর ধরেই চলে আসছে । এই শীতেও বক রক্ষা পাচ্ছে না এই শিকারীদের হাত থেকে।

শেরপুর ইউনিয়নের লঙ্গারপাড়  ও চন্ডীপাশা ইউনিয়নের ধুরুয়া গ্রামের ভাটুয়া বিলে গিয়ে দেখা গেছে- বক শিকারী রুবেল মিয়া (২৮) ও সোহেল মিয়া (২৫) বক শিকারে ব্যস্ত।


রুবেল মিয়া বাংলানিউজকে জানান, এলাকার বিল ও এর আশেপাশের ধান ক্ষেতে বকের উপস্থিতি বেশি। এরা ছোট ছোট মাছ ছাড়াও ব্যাঙ খেয়ে থাকে।  এই সুযোগে বক ধরা হয়।


বিলের পাড়ে যেখানে কোনও গাছপালা নেই সেখানেই ফাঁদটি পাতা হয়। কারণ, বসার জায়গার অভাবে বকগুলি আমাদের ফাঁদে ধরা দেয়।

সোহেল মিয়া আরও জানায়, ফাঁদ পাততে তিনটি চিকন বাঁশের খুঁটি তিনকোণাকৃতি করে পোঁতা হয়। এক পাশ খোলা রেখে প্রতিটি খুঁটির সঙ্গে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে টানা দিয়ে মানুষের সমান উচ্চতার একটি ঘর তৈরী করা হয়।

ওই ঘরের চারপাশ  কলাপাতা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। ওপরের ফাঁকা অংশটি সুন্ধি বেতের পাতা দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। এই কাঠামোটির পাশে একটি খুঁটি পুঁতে তাতে রাখা হয় পালিত বক পাখি।


আকাশে বক উড়ে যাওয়ার সময় শিকারির কাঠামোর ভেতরে থেকে পালিত বকের পায়ে বাঁধা রশি ধরে টানতে থাকে। বকটি তখন কক্ কক্ শব্দে ডেকে ওঠে।

অনেক সময় পালিত বক নিজেও ওই রকম শব্দ করে। উড়ন্ত বক ওই শব্দ শুনে কাছে আসে। আশেপাশে বসার জায়গা না থাকায় ত্রিকোনাকৃতির ঘরটির ওপরে রাখা সুন্ধি বেতের পাতায় বসা মাত্রই  হাত বাড়িয়ে বকের পা ধরে ভেতরে টেনে নেওয়া হয়।
এভাবে প্রতিদিন একেকজন শিকারি আট থেকে দশটি বক শিকার করতে পারে । এ শিকারের সময় একজন সহযোগীরও দরকার হয়।

সহযোগী শিকারী হাদিস মিয়া (৪০) বাংলানিউজকে জানায়, তিনি দূরে অবস্থান করে আকাশে উড়ন্ত বক দেখতে পেলে শিকারীকে সংকেত দেন। তারা জানান আগে  প্রতিদিন ২০/২৫টি বক শিকার করা যেত। এখন ৮-১০টি বকের বেশি শিকার করা যায় না ।


শিকারী সোহেল মিয়া জানান, একটি বক ৬০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হয়। বকসহ অন্যান্য পাখি ধরা অপরাধের কাজটি কেন করছেন প্রশ্ন করলে সোহেল জানান, এটা যে বেআইনি কাজ তার জানা নেই। সোহেল আরও বলে নান্দাইলের অনেক জায়গায় তো বক ধরা হয়।


নান্দাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক তাজুল ইসলাম খান বাংলানিউজকে বলেন, বকের মাংস খেলে বাত রোগ নির্মূল হয়-এটি সম্পূর্ণ  ভ্রান্ত ধারণা। তিনি বলেন, জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বক সংরক্ষণ প্রয়োজন’।

নান্দাইলের শহীদ স্মৃতি আদর্শ ডিগ্রি কলেজের প্রাণীবিজ্ঞানের প্রভাষক মুহাম্মদ বেলালুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, `শিকারীদের কথা থেকেই বোঝা যায়- বকের সংখ্যা দিনে দিনে কমে যাচ্ছে।`

বেলালুর রহমান বলেন, এরা ছোট ছোট মাছ, ব্যাঙ ও ক্ষতিকর পোকা মাকড় খেয়ে থাকে। আবার এদের বিষ্ঠা ফসলি জমির উর্বরতা বাড়ায় ও বিল-ঝিলের প্রাকৃতিক মাছের খাদ্যের উৎস হিসেবে কাজে লাগে। পরিবেশ সংরক্ষণে বন্যপ্রাণী নিধনরোধে গ্রামে সচেতনতা বাড়াতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৬, ২০১২