|
07 Oct 2012 06:51:22 PM Sunday BdST |
|
|
|
‘প্রেম’ঘটিত অন্যরকম একটি সমস্যা!
শাহ্ আলম ভূঁইয়া, নান্দাইল প্রতিনিধি বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
নান্দাইল(ময়মনসিংহ):
জোছনা বেগম ও তার স্বামী আব্দুল কাদিরের নিজের ভিটেবাড়ি নেই। অন্যের
জায়গায় ছাপড়া ঘর তুলে নান্দাইল উপজেলার দশালিয়া গ্রামে বসবাস। পেশায় আব্দুল
কাদির কৃষি শ্রমিক। মাঝে মধ্যে ইটভাটায় শ্রম বিক্রি করেন। স্ত্রী জোছনাও
সংসারের প্রয়োজনে মাঝে মধ্যে প্রতিবেশীদের বাড়িতে ফুটপরমাশের কাজ করতেন।
এভাবে সুখে-দুঃখে চলে যাচ্ছিল তাদের।
এই দম্পতির তিনটি সন্তান। বড় মেয়ে সালমা। বয়স ৬বছর। তারপর দুই ছেলে ইব্রাহিম, বয়স ৪বছর, ইসমাইলের বয়স দেড় বছর।
স্বামী-স্ত্রীর মতোই মেয়ে সালমা স্বাভাবিকভাবে ভূমিষ্ঠ হলেও দুই ছেলের
জন্ম হয়েছে ধবল শরীর নিয়ে। এ কারণে কাদির-জোছনা দম্পতির দুশ্চিন্তার শেষ
নেই।
কিন্তু এই দুশ্চিন্তাকে ডিঙ্গিয়ে জোছনা ও তার সন্তানদের জন্য সীমাহীন কষ্ট এনে দিয়েছেন আব্দুল কাদির।
গত ২৬ আগস্ট কাদির তার পুরনো প্রেমিকা ১ সন্তানের জননী রহিমা আক্তারকে(২৫) নিয়ে পালিয়েছেন।
এরপর
থেকে জোছনা তার অবুঝ সন্তানদের নিয়ে নিত্যদিন প্রায় উপোসে কাটাচ্ছেন।
সংসারে আর কোনো উপার্জনক্ষম লোক না থাকায় চুলোয় আর আগুন জ্বলানো সম্ভব
হচ্ছে না। এই অবস্থায় ধবল দুই সন্তান ইব্রাহিম ও ইসমাইলকে রেখে কোনো কাজেও
যেতে পারছেন না।
অপরদিকে, কাদিরের প্রেমিকা রহিমাও তার একমাত্র সন্তান সাব্বিরকে(৫) রেখে গেছে। সাব্বিরকে এখন নানী হাদিসা বেগম দেখাশোনা করছেন।
রহিমা
সম্পর্কে কাদিরের (৩৮) মামাতো বোন। নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার রয়াইল
এলাকার রহমত আলীর ছেলে জাসদের সাথে বিয়ে হয়েছিল রহিমার।
নানী
হাদিসা জানান, নাতী সাব্বির অন্য বাচ্চাদের সাথে খেলাধুলায় ব্যস্ত থাকলেও
হঠাৎ মায়ের কথা মনে পড়লে দৌঁড়ে এসে ঘরে গিয়ে কান্না জুড়ে দেয়। তিনি বলেন,
মায়ের কাজ কি অন্যদের দিয়ে হয়?
প্রতিবেশী আনোয়ার হোসেন (৩৮) জানান, জোছনার ছেলেরা রোদে বের হতে পারে না। কিছুক্ষণ রোদে থাকলে শরীরে আগুনে পোড়ার মত ফোসকা পড়ে যায়।
আব্দুল
কাদিরের বোন সখিনা বেগম(৩৬) বলেন, জোছনা সন্তানদের নিয়ে আধাপেটা অবস্থায়
রয়েছে। প্রথম প্রথম গ্রামের লোকজন কিছুটা সহায়তা করলেও এখন তেমন করছে না।
কে কার সংসার চালাবে বলেন?
ক্ষুব্ধ কণ্ঠে সখিনা বলেন, কাদির-রহিমার অনৈতিক সম্পর্কের কারণে তিনটি পরিবারে দুরস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
এ
ঘটনার পর জাসদ কয়েকদিন তার সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে শ্বশুর বাড়িতে
অবস্থান করে স্ত্রীর অপেক্ষায় ছিলেন। এখন তিনিও বাড়ি চলে গেছেন।
জোছনা
বেগম বলেন, এখন আমি কি করব? সন্তানদের মুখে তিন বেলা খাবার তুলে দিতে
পারছি না। নিজেও খাইতে পারছি না। ওদেরকে কার কাছে রেখে অন্যের বাড়িতে যাব
কাজ করতে? এ অসহায় অবস্থার মধ্যে নিজে মরতেও পারছি না সন্তানদের ভবিষ্যত
চিন্তা করে। আমি না থাকলে ওদের কী হবে?
এদিকে, কাদির-রহিমার পলায়নের
ঘটনায় রহিমার বাবা সঞ্জু মিয়া গত ৩০ সেপ্টেম্বর নান্দাইল মডেল থানায় তার
মেয়ে অপহরণের অভিযোগে একটি মামলা (নং ৩৯) দায়ের করেন।
এ প্রসঙ্গে অভিযোগের তদন্তকারী নান্দাইল মডেল থানার উপ-পরিদর্শক হুমায়ুন কবীর জানান, অভিযোগটি আমলে নেওয়া হয়েছে। তদন্ত চলছে।
পুনশ্চ:
কেউ কেউ হয়তো ৩ সন্তানের জনক কাদির আর ১ সন্তানের জননী রহিমার এই
সংসার-ভাঙ্গা প্রণয়ে ‘অসাধারণ প্রেমের’ উপাখ্যান খুঁজে পেতে পারেন; কিন্তু
প্রশ্ন হলো, জোছনা ও তার অবুঝ সন্তান বিশেষ করে ধবল-রোগে আক্রান্ত দু’টি
অবুঝ সন্তানের কী অপরাধ ছিল এখানে?
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৯ ঘণ্টা, ০৭ অক্টোবর, ২০১২ সম্পাদনা: আহ্সান কবীর, আউটপুট এডিটর |